Skip to main content

Koch's Postulates; সংক্রামক রোগ গবেষণার নতুন দুয়ার

বিবর্তনতত্ত্ব অনুসারে মানবসভ্যতা সৃষ্টির বহু অাগে সৃষ্টি হয়েছিলো এককোষী ব্যাকটেরিয়া কিংবা অকোষীয় ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণু। অামাদের অাদি পূর্বপুরুষরাও বিভিন্ন সংক্রামক রোগে অাক্রান্ত হতেন, যার প্রমাণ অামাদের ইমিউন সিস্টেম। মানুষ কিংবা অন্যান্য জীবজন্তুর সৃষ্টির অাদিলগ্ন থেকেই সংক্রামক রোগের যাত্রা শুরু হলেও এর পেছনের কারণটা অামাদের জানা ছিল না। রোগের কারণ উদ্ধারে ছিল মানুষের কিছু থিওরি। রোগ-ব্যাধিকে কেউ ভাবতেন নিজেদের পাপের ফসল, কেউ ভাবতেন ঈশ্বরের অভিশাপ, কেউ ভাবতেন দেবতার রুষ্টতা। এসব প্রতিকারের জন্যও চলতো নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, অর্ঘ্য, বলি। কলেরা মহামারীর পেছনে ছিল "মিয়াসমা থিওরি"। মিয়াসমা হলো বিভিন্ন বর্জ্য থেকে অাসা দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস যা মানুষে কলেরা রোগ সৃষ্টি করে। ষোড়শ শতাব্দীর দিকে অাসে Germ Theory, যেটা পরবর্তী শতকগুলোতে অারো গ্রহণযোগ্যতা পায়।

সংক্রামক রোগে এই Germ Theory কে প্রথম যৌক্তিক গ্রহণযোগ্যতা দেন জার্মান চিকিৎসক ডা. হেনরিখ হারম্যান রবার্ট কচ, সংক্ষপে রবার্ট কচ (১৮৪৩-১৯১০)। মহান এই চিকিৎসককে ব্যাক্টেরিওলজির অন্যতম পাইওনিয়ার বলা হয়। তাঁর বিখ্যাত Koch's Postulates সংক্রামক রোগ গবেষণায় নতুন দ্বার উন্মোচন করে।

রবার্ট কচ ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ছিলেন। স্কুলের পাট চুকিয়ে কচ প্রকৃতিবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন University of Gottingen এ। পরবর্তীতে চিকিৎসক হওয়ার প্রবল অাকাঙ্ক্ষা থেকে ভর্তি হন মেডিসিনে। এখানে পড়া অবস্থায় তিনি কাজ করার সুযোগ পান অ্যানাটমি ও প্যাথলজির বিখ্যাত প্রফেসর জ্যাকব হেনলির সাথে (যিনি নেফ্রনের লুপ অব হেনলির জন্য বিখ্যাত)। প্রফেসর হেনলির সাথে কচ গবেষণা করেন Uterine nerve নিয়ে। পরবর্তীতে গবেষণায় কচ তাঁর গুরুর মতোই সাফল্য পান।

১৮৮০ সালে রবার্ট কচ বার্লিনের Imperial Department of Health এর Govt. Advisor হিসেবে দায়িত্ব পান। সেখানে তাঁর কাজ ছিল ব্যাক্টেরিয়ার isolation method বের করা এবং সেগুলোকে কালচার করা, সেখান থেকে Disease Prevention এ স্ট্যাটেজি বের করা। ব্যাক্টেরিয়া কালচারের জন্য প্রথমে অালুর স্লাইস ব্যবহার করেন, পরে ব্যবহার করেন জেলাটিন। এ দু'টোতে তেমন সাফল্য না পেয়ে কচ অবশেষে Agar দিয়ে কালচার করেন এবং সফল হন। ১৮৮১ সালে Pure Culture এ রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর কালচার এবং সেগুলোকে isolate করার পদ্ধতি বিষয়ে তিনি একটি রিপোর্ট দাখিল করেন।

১৮৮০ সালে রবার্ট কচ Tuberculosis নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। তখনকার সময়ে টিউবারকুলোসিসকে Hereditary বা বংশগত রোগ মনে করা হতো। কচ নিজের পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখান যে, টিউবারকিউলোসিস কোনো বংশগত রোগ নয়, বরং Mycobacterium tuberculosis নামের এক ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে এ রোগ হয়। তবে রোগের ওষুধ হিসেবে Tuberculin ব্যবহার করে তিনি ব্যর্থ হন এবং বিতর্কিত হন। এই Tuberculin ই এখন যক্ষ্মার screening test হিসেবে পরিচিত।

১৮৮৪ সালে কলেরার জীবাণু অাবিষ্কারের জন্য ভারতে অাসেন। ভারতের বোম্বের Grant Medical College (মতান্তরে ব্রিটিশ কলকাতায়) এ বসে রিসার্চ করে তিনি প্রমাণ করেন, Vibrio cholerae নামক কমার মতো দেখতে একটি ব্যাক্টেরিয়াই কলেরার জন্য দায়ী। এর অাগে তিনি Anthrax রোগীর ক্ষত থেকে Bacillus anthracis অাইসোলেট করেন। 

ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে কিছু গবেষণার পর রবার্ট কচ বুঝতে পারলেন, রোগের পেছনে অাসলে কোনো না কোনো ব্যাক্টেরিয়া দায়ী। তাই ১৮৯০ সালে তিনি Henrich Loeffler এর সাথে Koch' Postulates প্রস্তাব করেন। Postulate গুলো হলো -

1) The Micro-organism must be found in abundance in all organism suffering from the disease but should not be found in healthy organisms.

2) The micro-organism must be isolated from a diseased organism and grown in pure culture.

3) The cultured micro-organism should cause disease when introduced into a healthy organism.

4) The micro-organism must be re-isolated from the inoculated, diseased experimental host and identified as being identical to original specific causative agent.

১৯০৫ সালে চতুর্থ postulate টি যোগ করেছেন প্ল্যান্ট বায়োলজিস্ট ই.এফ. স্মিথ। Koch's postulates সংক্রামক রোগের গবেষণায় এক নতুন দুয়ার খুলে দেয়। এই ধারণার পরিপ্রেক্ষিতে অাস্তে অাস্তে অন্যান্য সংক্রামকে রোগেরও পেছনের কারণ বেরিয়ে অাসতে থাকে। দুনিয়াজুড়ে সংক্রামক রোগের ওপর রিসার্চ শুরু হয়। তবে রিসার্চ যত এগুতে থাকে, অাস্তে অাস্তে Koch postulates এর কিছু সীমাবদ্ধতা বেরিয়ে অাসে। যেমন, প্রথম postulate এর কথা যদি বলা হয়, সেখানে দেখা যায় exposed হলেই disease হবে এমন কোনো কথা নেই। Micro-organism এপিডেমিওলজিকাল ট্রায়াডের একটা অংশ মাত্র, রোগ হওয়ার জন্য বাকি দুটো component - Host factor & Environmental factor ও থাকতে হবে। তাছাড়া asymptomatic case এ জীবাণু পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে, টিউবারকুলার লেপ্রোসির ক্ষেত্রে ব্যাক্টেরিয়া অাইসোলেট করা যায় না। ২য় postulate এর সীমাবদ্ধতাও দেখা যায় Mycobacterium leprae এর ক্ষেত্রে।  অার্টিফিশিয়াল কালচারে এর গ্রোথ হয় না। ভাইরাসও অার্টিফিশিয়াল কালচারে গ্রো করে না। ৩য় postulate এক হিসেবে অানইথিক্যাল। তাছাড়া একই জীবাণু একটি প্রাণিতে রোগ তৈরি করে অন্য প্রাণিতে রোগ নাও তৈরি করতে পারে। যেমন নোভেল করোনা ভাইরাস বাদুরে ছিল, কিন্তু রোগ সৃষ্টি করেনি। অথচ মানুষে এসে এই ভাইরাস Pandemic এ রূপ নিয়েছে। 

  • অনেক রকম সীমাবদ্ধতা থাকলেও Koch's postulates এপিডেমিওলজিকাল রিসার্চের  এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অাজকে অামাদের ল্যাবগুলোতে যে ব্যাক্টেরিয়ার কালচার সেনসিটিভিটি হয়, সেগুলো Koch postulates এরই অবদান। Tuberculosis এর ওপর গবেষণার জন্য নোবেল কমিটি রবার্ট কচকে ১৯০৫ সালে Physiology or Medicine এ নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে। অাজকের ব্যাক্টেরিওলজির এতদূর অাসার পেছনে Rober Koch এর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Comments

Popular posts from this blog

Conformism - দর্শনশাস্ত্রের প্রথম বাধা

 প্রাতিষ্ঠানিক রেজাল্টের ভিত্তিতে যদি ছাত্রদের ক্লাসিফিকেশন করা হয়, তাহলে মেডিকেল কলেজে আসার আগে আমি ছিলাম নিতান্ত নিম্ন-মধ্যবিত্ত সারির ছাত্র। ক্লাস এইটে গণিতে একবার আর ক্লাস নাইনে দুইবার উচ্চতর গণিতে ফেল করার নজির আছে। নজরুল স্যার নামের আমার একজন শিক্ষক প্রতিটা নিয়মের একটা করে অংক বোর্ডে করে দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করতেন। ঐ অংকের প্রয়োজনীয়তা কী, কেন করলাম, অ্যাপ্লিকেশন কী - এসব বোঝানোর প্রয়োজন বোধ করতেন না। অংক করতে পারলেই হলো। আমিও হুবহু সেই অংক কপি পেস্ট করে চালাতাম। শখে করতাম, তা নয়। কারণ, "স্যার, অংকটা বুঝিনি" বললে আমার পশ্চাৎদেশে Erythema করার জন্য যত ঘা বেত লাগানো প্রয়োজন, তার চেয়ে দু চার ঘা কম পড়তো বলে মনে পড়ে না। আমার স্কুলের কথা বাদ দিই, হয়তো বাংলাদেশের বেশিরভাগ স্কুলেই এরকম এক-দু'জন করে "নজরুল স্যার" আছেন।  মেডিকেল কলেজে আসার পর দেখলাম, না বুঝলে প্রশ্ন করা যায়, এখানে মারের ভয় নেই। না বুঝলে শিক্ষকের রুমে গিয়েও আধা ঘণ্টা সময় লাগলেও যে কোনো টপিক বুঝে আসা যায়। এরকম সুযোগ আমি আগে কখনও পাইনি। এই সুযোগে আমার প্রশ্ন করার পরিমাণ বেড়ে গেলো, সব ক্লাসের শেষেই প্রশ্

দেশপ্রেমের কাহিনি-কেচ্ছা

 একদা একদল মানুষ জঙ্গলে বসবাস করিতেন। তাহারা স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে শিকার করার পাশাপাশি ফলমূল সংগ্রহ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেন। কালের পরিক্রমায় সেই মনুষ্যদল ধাপে ধাপে আলু, ধান, গম ইত্যাদি শস্যের উৎপাদন করিতে শিখিলেন। কৃষিকার্যের উন্নতির ফলে উদ্বৃত্ত ফসল নামক আশীর্বাদরূপী সমস্যার উদ্ভব হইলো। জন্ম হইলো সম্পত্তির, পিতৃত্বের ধারণার অঙ্কুরোদগম হইলো। স্ত্রীলোকের স্হান নির্ধারিত হইয়া গেলো কুটিরে, সন্তান প্রতিপালন করাই হইয়া গেলো তাহার প্রধান কর্ম। এইদিকে, সম্পত্তির ভোগদখল লইয়া নানানরকম সমস্যা তৈরি হওয়ায় পুরুষগণ তাহাদের মধ্য সর্বাধিক বলশালী ব্যক্তিকে নিজেদের সম্পত্তি দেখভাল তথা বিভিন্ন অন্যায়ের বিচারের নিমিত্তে শাসনকর্তা তথা রাজা নির্বাচন করিলেন এবং তাহার ভরণপোষণের নিমিত্তে নিজেদের উদ্বৃত্ত ফসলের কিছু অংশ (খাজনা) উহাকে দিতে লাগিলেন। সেই রাজা বংশপরম্পরায় নিজের পদ ধরিয়া রাখিলেন এবং একসময় সবার সম্পত্তিকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্থাৎ রাজ্য বলিয়া ঘোষণা করিলেন। যাহারা রাজাকে "রাজা" নির্বাচন করিলেন, তাহারা "প্রজা" উপাধিপ্রাপ্ত হইলেন এবং অধঃস্তন বলিয়া গণ্য হইলেন। ব্যক্তিগত সম্

"সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো"

 ইন্টার্নশিপের সময় আমি বেতন পেতাম না। তখন বাংলামোটরের ঐদিকে একটা টিউশনি করে চলতাম। মগবাজার ওয়্যারলেসের রাস্তাটা পার হয়ে সোজা হেঁটে যেতাম, ওটাই ছিল আমার নিয়মিত চলাচলের পথ। একদিন কী ভেবে যেন টিউশনিতে গেলাম না। সন্ধ্যার পরে একটা বিকট শব্দ হলো। বাসা থেকে বেরোতেই দেখি দলে দলে মানুষ ওয়্যারলেস গেটের দিকে ছুটে আসছে। এতদিন এই এলাকায় থাকি, এরকম কখনও দেখিনি। শুনলাম মগবাজার আড়ঙ এর অপরপাশে কিছু একটার বিস্ফোরণ হয়েছে, কিসের থেকে হলো তা তখনও অজানা। আহতরা দলে দলে আমাদের হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ছুটে আসছে। আমিও ছুটে গেলাম সাহায্য করতে। গিয়ে দেখি সামি, সাবিনা, শ্রেয়াদের অ্যাপ্রন রক্ত আর ঘামে একাকার। Severely injured পেশেন্টদের একদিকে স্টিচ দিচ্ছি, অন্যদিকে ব্যান্ডেজের জন্য দৌঁড়াচ্ছি। এমন সময় একটা দুই বছরের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে একজন দৌঁড়ে এলো, সম্পর্কে সে বাচ্চাটির মামা। বোন আর ভাগ্নেকে নিয়ে আড়ঙ এর উল্টোপাশে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে খেতে এসেছিলেন, বোনটা ইতোমধ্যে মারা গেছে, বাচ্চাটাও মৃত। তবুও আশা করে এসেছেন, যদি বাঁচানো যায়। বাচ্চাটার দিকে তাকালাম, দেহে প্রাণ নেই, সারা শরীরে কাচের টুকরো বিঁধে আছে। একটা একটা